Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাগজি লেবু

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাগজি লেবু

মৃত্যুঞ্জয় রায়

লেবু নামটা এসেছে সংস্কৃত ‘নিম্বু’ থেকে। নিম্বু থেকে নিমু  পরিশেষে হয়েছে লেবু। লেবু নামটা যত সহজ, ফলটা তত সহজ নয়। এদেশে সিলেটেই আছে প্রায় আশি রকমের লেবু। এক এক লেবুর আকার-আকৃতি ও স্বাদ ভিন্ন রকম- কোনটা ভীষণ টক, কোনটা আবার ভীষণ মিষ্টি। সাধারণভাবে টকজাতীয় বা সাইট্রাসজাতীয় ফল বলা হয় লেবুকে। সব লেবু টক নয়। সুইট অরেঞ্জ, মাল্টা, কমলা,  চাইনীজ কমলা-এসব মিষ্টি স্বাদের লেবু। অন্যদিকে কালামুন্সি, কাগজি, এলাচীলেবু- এসব টক স্বাদের। বাতাবি লেবু  টক-মিষ্টি। ঘ্রাণের দিক দিয়েও এক লেবুর ঘ্রাণ এক এক রকম। লেবুতে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণেই লেবুর এত ভিন্নতা। কাজেই ভেষজ গুণ যে সব লেবুর একই রকম সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। কবি কালিদাসের একটা হেঁয়ালী মনে পড়ছে- ‘বন থেকে বেরুলো পেতি, পেতি বলে আমি তোর পাতে মুতি।’ পাতে অর্থাৎ ভাতে মুততে সব লেবু পারে না। কাগজিলেবুর আর এক নাম পাতিলেবু- পাতিলেবুকেই মনে হয় কালিদাস বলেছেন পেতি। পাতে মুতায় কাগজিলেবুর অধিকার অগ্রগণ্য। এখানে তাই কাগজি লেবুকে আমিও অগ্রাধিকার দিলাম আলোচনায়। শুধু আমি কেন, এই করোনাকালে সবাই এখন লেবুকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। নানাভাবে লেবু খাওয়ার অভ্যাস করছেন। এক্ষেত্রেও স্বাদে-গন্ধে-উপকারে কাগজিলেবু সেরা।
গাছের পরিচয়
লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু তুলনামূলকভাবে ছোট বলে এর অন্য নাম হয়েছে পাতিলেবু। আবার পাত মানে ভাত খাওয়ার থালায় এর ব্যবহার রয়েছে বলেও এর নাম পাতি লেবু হতে পারে। ছোট হলেও কাগজি লেবুর যে সুঘ্রাণ তা আর কোন লেবুতে নেই। এ লেবুর গাছ খুব বড় হয় না, ডালপালা কিছুটা লতানো ও ঝোপাল, কাঁটাময়। পাতা ডিম্বাকার ও ছোট, চকচকে সবুজ। ফুলের রঙ সাদাটে। কাগজিলেবু লম্বাটে, খোসা মসৃণ ও পাতলা, সবুজ ও চকচকে। খোসায় নখের আঁচড় দিলে কাগজিলেবুর বিশেষ ঘ্রাণ পাওয়া যায়, যা অন্য কোন লেবুতে পাওয়া যায় না। প্রায় সারা বছরই গাছে ফুল ফল ধরে। তবে মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেশি লেবু ধরে। কাগজিলেবু অ¤øরসযুক্ত। ভেতরের কোষ হালকা সবুজাভ সাদা ও রসে পরিপূর্ণ থাকে। পরিণত হলে বেশি রস হয়। ভেতরে স্বল্প বীজ হয়। বর্তমানে বীজবিহীন জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে।
ভেষজ গুণ
কাগজিলেবুতে উচ্চমাত্রায় অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম খনিজ দ্রব্য যা দেহের ¯œœায়ুর চালিকাশক্তি বৃদ্ধি করে। আরও আছে কিছু এসেনসিয়াল অয়েল। এই তিন ধরনের রাসায়নিক যৌগসমূহ এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লাভিনয়েডস, ফেনল, কুমারিনস, ট্যানিন, অ্যালকালয়েড, লাইকোপেন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড ইত্যাদি যৌগগুলোর সাথে মিলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। এসব উপাদানগুলোর কারণে কাগজিলেবু এন্টিসেপটিক, কৃমিনাশক, ছত্রাক জীবাণুনাশক, ব্যাকটেরিয়া জীবাণুনাশক, ভাইরাস  জীবাণুনাশক, এন্টিক্যানসার হিসেবে ও আন্ত্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। কাগজিলেবু বয়স ধরে রাখতে বা দেহের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিপুল পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট এ দায়িত্ব পালন করে। নিচে কাগজিলেবুর ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১. অরুচি ও পেটফাঁপা
কাগজিলেবুর লোকায়ত এ ব্যবহারের কথা জানেন না এমন লোক বোধ হয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোন কিছু দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না, খাওয়ায় কোন রুচি নেই। এ অবস্থা হলে খাওয়ার পরেও তা হজম হবে না, পেট ফাঁপবে। তাই অরুচি নিয়ে কোন কিছু না খাওয়া ভাল। অরুচি হলে সেই খাবারে সাথে কাগজিলেবুর রস চিপে মিশিয়ে খেলে দ্রæত খাবারে রুচি ফিরে আসে ও তা হজম হয়। অরুচি হলে একটা লেবুকে দুভাগ করে অর্ধেক সকালে ১ কাপ পানির সাথে ও বিকেলে বাকি অর্ধেক আর ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে একইভাবে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। সপ্তাহখানেক এভাবে লেবু-পানি খাওয়ার পর অরুচি চলে যাবে।
২. ক্লান্তিবোধ
খেলাধুলা বা অধিক পরিশ্রমের পর শরীরটা এলিয়ে আসে, ক্লান্তি জড়িয়ে ধরে। একটানা কোন কাজ করলেও ক্লান্তিভাব চলে আসে। এ অবস্থায় এক গøাস পানিতে একটা কাগজিলেবু চিপে তার রস সামান্য লবণ মিশিয়ে শরবত করে খেলে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর সাথে ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে আরও ভালো কাজ হয়।
৩. মেদবৃদ্ধি, কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত
ফার্স্ট ফুড আর জাংক ফুডের জামানায় মেদবৃদ্ধি ও স্থ’ূলতা সারা বিশ্বব্যাপী এক সাধারণ সমস্যা। সে সাথে কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত বড় সমস্যা। তাই মেদ বৃদ্ধি, সাময়িক কোষ্ঠবদ্ধতা ও গিঁটবাত ঠেকাতে রোজ যেমন আমরা দাঁত ব্রাশ করি, তেমনই লেবু-জল খাওয়াকে একটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। রোজ সিকি টুকরো কাগজিলেবু (অন্য লেবু হলেও চলবে) চিপে রস করে তা ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় খেতে হবে। এটা সারা জীবন চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে মেদবৃদ্ধি, কোষ্ঠবদ্ধতা অনেকটা ঠেকে যাবে এবং মেদ বৃদ্ধিজনিত অনেক রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ইউরিক এসিডের আধিক্যজনিত কারণে গিঁটে যে ব্যথা হয় তাও চলে যাবে।
৪. কৃমিরোগ
শিশুরা কৃমি রোগে বেশি ভোগে। তাই শিশুদেরও লেবুর রস খাওয়াতে হবে। ৪-৫ বছর বয়সী শিশুদের বেলায় অর্ধেক পরিমাণ কাগজি লেবুর রস ২ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের বেলায় একই পরিমাণ পানিতে দিতে হবে ১টি লেবু, পূর্ণবয়স্কদের বেলায় ২টি লেবু। মাত্র এক সপ্তাহ এটা খেলে সুতা কৃমি, গোল কৃমি, ফিতা কৃমি- যাই থাকুক না কেন উপদ্রবটা দূর হবে।  
৫. ঠাÐালাগা
ঠাÐা লেগে সর্দি হলে, নাক দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকলে রঙ চায়ের সাথে আধ টুকরো লেবুর রস ও ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে দ্রæত সুফল পাওয়া যায়। এর সাথে কয়েক টুকরো আদা দেয়া যেতে পারে। একবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর আবার খেতে হবে। এই ভাবটা না যাওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে এক সময় নাক দিয়ে পানি বা সর্দি ঝরা বন্ধ হবে।
৬. হাঁচি-কাশি ও স্বরভঙ্গ
অ্যাজমা বা হাঁপানি হলে সেই সাথে কাশিটাও হতে পারে। অনেক চেঁচামেচি বা হঠাৎ সর্দিকাশি হলে গলা ভেঙে যায়। এরূপ ক্ষেত্রে একটি কাগজিলেবু মাঝখান বরাবর লম্বালম্বিভাবে দোফালা করে চিরে তার বুকে লবণ মাখাতে হবে। তারপর সেই লেবুর টুকরো হালকা আঁচে আগুনে গরম করতে হবে। লেবু গরম হলে লবণ গলে লেবুর সাথে মিশে যাবে। তখন সেটা নামিয়ে চিপে সহ্যমতো গরম রস জিভের উপর ছাড়তে হবে ও চেটে খেতে হবে। এভাবে সারা দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে এ অসুবিধা চলে যাবে।
৭. পুরনো জ্বর
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি জ্বরে দীর্ঘদিন ভোগার পর মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায়, তখনো মনে হয় জ্বরটা  পুরোপুরি যায়নি, শরীর দুর্বল লাগে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, খিদে কম লাগে, কাজে মন বসে না। এরূপ অবস্থায় সব ওষুধ বন্ধ করে শুধু লেবু চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। রোজ সকালে ও বিকালে হালকা গরম পানিতেলেবুর রস মিশিয়ে এক মাস খেয়ে যেতে হবে। টক বেশি লাগলে এর সাথে সামান্য লবণ মেশানো যেতে পারে। এটা খেলে জন্ডিস রোগেও উপকার পাওয়া যায়।
৮. খুসকি
একটা কাগজিলেবুর রস তার চার গুণ পরিমাণ গরম পানেতে মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় মাখিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে। রস শুকিয়ে গেলে গোসল করে স্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। একদিন অন্তর একদিন এভাবে ৩-৪ বার লেবুর রস দিলে চুল ও মাথা খুসকিমুক্ত হবে। না গেলে আরও কয়েক দিন লাগাতে হবে। যে কোন লেবুর রসে এ কাজ হতে পারে।
৯. দাদ
লেবু দিয়ে কত সহজেই না দাদ রোগ সারা যায়! একটা কাগজিলেবু মাঝ বরাবর কেটে বা চিরে সেই টুকরো কিছুক্ষণ দাদের উপরে ঘষতে হবে। এভাবে দিনে ২ থেকে ৩ বার ঘষলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দাদরোগ ভালো হয়ে যাবে। একইভাবে লেবু ঘষে মুখের মেছতা ও ছুলি দাগ দূর করা যায়।
১০. দাঁতে পাথর
আধা চা-চামচ খাবার সোডা, একটু লবণ। এর সাথে লেবুর রস দিলে গ্যাজা উঠবে। এর সাথে টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ব্রাশ করলে দাঁতের লালচে ভাব কেটে সাদা হবে ও দাঁতের ফাঁকে জমা পাথর হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রতি মাসে একবার এটা করলে দাঁত সবসময় সাদা থাকবে।
১১. চুল পাকা
পাকা চুল কালো করার জন্য আমলকি ছেঁচে বেটে মলমের মতো করতে হবে। তার সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মাখতে হবে। এতে সাদা চুল কালো হবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে। রোজ বা সপ্তাহে একদিন এটা করা যায়। রোজ করলে তাড়াতাড়ি চুল কালো হবে। এ ছাড়া আর একভাবে সাদা বা পাকা চুল কালো করা যায়। এজন্য ২ চা-চামচ চা পাতি, ২ চা-চামচ হেনা পাউডার  ও ২ চা-চামচ মধু একসাথে ছোট একটা বাটিতে নিয়ে ভালো করে ফেটতে হবে। এরপর তার মধ্যে একটু লেবুর রস দিয়ে আবারও ভাল করে তা মিশাতে হবে। এর সাথে একটু পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটার পর নামিয়ে ঠাÐা করে তা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ম্যাসাজ করতে হবে। ব্যবহারের আগে মাথা ভাল করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে। তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত ভাল করে মেখে ২০ মিনিট রেখে পরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। য়

 

প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি-২ প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭
ই-মেইল : kbdmrityur@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon